কেয়ার ভিসা না হওয়া স্বামীকে ছাড়তে মেয়েকে পরিবারের চাপ : থানায় অপহরণ মামলা দিয়ে হয়রানি

কেয়ার ভিসা না হওয়া স্বামীকে ছাড়তে মেয়েকে পরিবারের চাপ : থানায় অপহরণ মামলা দিয়ে হয়রানি

ওসমানীনগর প্রতিনিধি

সিলেটের ওসমানীনগরে এক দম্পতির যুক্তরাজ্যের কেয়ার ভিসা না হওয়ায় গৃহবৃ‍‌ধূকে স্বামীর ঘর ছাড়িয়ে অন্যত্র কোন যুক্তরাজ্য প্রবাসীর কাছে বিয়ে দিতে গৃহবৃ‍‌ধূর মা এবং মামা মরিয়া হয়ে স্বামীর পরিবারে তালাকের চাপ প্রয়োগের পর ব্যর্থ হয়ে ঐ দম্পতির নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশি হয়রানী করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকে পুলিশি হয়রানীর ভয়ে রয়েছেন এ দম্পতি।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের দুরাজপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম (২৬) ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের কামাল পারভেজের মেয়ে জুঁই আক্তার প্রিয়ার (২৪) ৬ লাখ টাকা কাবিনে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। জুঁই আইইএলটিস সম্পন্ন থাকায় এই দম্পত্তি যুক্তরাজ্য যাওয়ার জন্য কেয়ার ভিসায় আবেদন করে ভিসা পাননি। বিবাহের পর সাড়ে ৪মাস সংসার করার পর জুঁই স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। তখন জুঁইয়ের মা রুনা বেগম, কুয়েত প্রবাসী মামা সুহেল মিয়া এবং অপর মামা রুবেল মিয়া জুঁইকে চাপ দেন তার স্বামী কামরুলকে তালাক দিয়ে অন্য কোন যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্বামীকে বিয়ে করার জন্য। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সালিশের আয়োজন হলেও বিষয়টি নিস্পত্তি হয়নি। স্বামীকে তালাক দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে জুঁইকে তার মা ও মামা শারিরিক নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে ২০২৪ সালে জুঁইকে দিয়ে স্বামী কামরুলসহ স্বামীর পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা যৌতুকের মামলা করানো হয় এবং তাকে বাবার বাড়িতে আটকে রাখা হয়। এ মামলায় স্বামী কামরুলকে পুলিশ গ্রেফতার করলে দুই সপ্তাহ কারাভোগ করে জামিনে ছাড়া পান। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি জুঁই আক্তার প্রিয়া তার স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন। তখন জুঁইয়ের মা রুনা বেগম বাদি হয়ে জ্ুঁইকে অপহরণের অভিযোগে কামালবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশ দু’টি গাড়ী নিয়ে স্বামীর বাড়িতে এসে জুঁই দম্পতিকে বাড়িতে না পেয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে যাওয়ার কথা বলে যান। এরপর থেকে এ দম্পত্তি পুলিশের ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

জুঁই আক্তার প্রিয়া বলেন, আমি ২৪ বছরের একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে। অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছি। আইইএলটিএস সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্যের কেয়ার ভিসার আবেদন করলে ভিসা না হওয়ায় কারণে আমার মা রুনা বেগম ও মামা রুবেল মিয়া আমাকে চাপ দিচ্ছেন আমার স্বামীকে তালাক দিয়ে অন্য কোন যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে বিয়ে করার জন্য। আমাকে নির্যাতন করে তারা আমার স্বামীর নামে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। আমি স্বামীর বাড়িতে এসে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছি। আমি একবারই বিয়ে করেছি, আর বিয়ে করতে চাইনা। এখন তারা আমার স্বামীর নামে মিথ্যা অপহরণের অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ আমাদের অহেতুক হয়রানী করছে।

কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী ঠিক আছি। বাহির থেকে রুবেল নামের আমার এক মামা শ্বশুর সমস্যা করছেন। আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলও খাটিছেন। তিনি আমাকে হুমকিও দিয়েছেন। আমরা আবার কেয়ার ভিসার জন্য আবেদন করবো, ভিসা পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

রুনা বেগমের মোবাইলে কল করা হলে তার ছেলে জিহান আহমদ বলেন, আমার আম্মা অসুস্থ, তিনি কথা বলতে পারবেন না। আমার বোন ক্লাসে গিয়েছিলেন, আর বাড়িতে আনেস নি। তিনি স্বামীর বাড়ি গেলে থানায় এসে বলুক। আমরা থানায় মামলা দিয়েছি। যা জানার থানায় এসে জেনে যান।

কামালবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল কাদির বলেন, একটি অপহরণের আভিযোগ পেয়ে মেয়ের স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তাদের পাই নাই। মেয়ের দেবরকে বলে এসেছি, সে যদি স্বেচ্ছায় তার স্বামীর বাড়ি যায়, তবে থানায় এসে যেন বলে যায়, সে এখনো থানায় আসেনি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff